*যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু, দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ১০ বিষয়ে প্রাধান্য
* ২০২৬ সালের মধ্যে রেলওয়ে আইন হালনাগাদকরণ ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদ
* স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে
যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে সরকার রেলের দুই বছর মেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনায় যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, বন্ধ স্টেশন পুনরায় চালু, দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ১০টি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসময়ের মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে সেবার গুণগত মান বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলের জন্য গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনায় প্রথমেই যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিতকরণ, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া ও ট্রেন চলাচল বিলম্বের কারণ উদ্ঘাটন এবং তা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তিন মাস মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো হলো যাত্রীর চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন রুটে ট্রেন ও কোচের সংখ্যা সমন্বয়; অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ আদেশ প্রত্যাহার করে সেকশনাল গতি বৃদ্ধি; দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক জরুরি সহযোগিতা দিতে ‘কুইক রেসপন্স টিম গঠন; যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে জোন ও ডিভিশনভিত্তিক মনিটরিং সেল গঠন; ট্রেনের ওয়াশ রুমসহ ক্যারেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সিট ও জানালা প্রভৃতি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করে লাইট, ফ্যান, এসি ইত্যাদি সচল রাখা নিশ্চিত করা; গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে যাত্রীদের জন্য ‘রিয়েল টাইম ট্রেন ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম প্রবর্তন; যাত্রীদের জন্য কল সেন্টার বা হটলাইন নম্বর চালু এবং স্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে সেবা সম্পর্কিত মতামত গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু। এসব পরিকল্পনা আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০২৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সময়াবদ্ধ সংস্কার পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যমান রেলওয়ে আইন হালনাগাদকরণ ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের যে মাস্টার প্ল্যান তা হালনাগাদ করা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০-এর খসড়াটি আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হবে। রেল সংশ্লিষ্টদের মতে, ওই নীতিমালার মাধ্যমে সহজে রেলের জমি ইজারা দেয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে মামলাসহ অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিও সহজ ও দ্রুত করা যাবে। নিশ্চিত হবে রেলভূমি রেকর্ড ও দখল, ফলে বাড়বে রাজস্ব আয়। সূত্র আরো জানায়, সরকার রেলের জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি করে রেলসেবার পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদি মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় শূন্য পদে নিয়োগ, রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি, ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিটগুলো আধুনিকায়ন করে দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম হালনাগাদ ও দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আর আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। আগামী ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে পুরনো ১০টি লোকোমোটিভ (ট্রেনের ইঞ্জিন) ও ওভারডিউ অবস্থায় থাকা ৮০টি কোচ পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই সঙ্গে টাইমটেবিল অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনার জন্য ১০০টি কোচ সংগ্রহ করা হবে। সংস্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে স্থাপন করা হবে নতুন দুটি রেললাইন। কোচ ও লোকোমোটিভ কারখানার জন্য সংগ্রহ করা হবে আধুনিক মেশিন। এদিকে সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, সংস্কার পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে যৌথভাবে আলোচনা করে ১০টি বিষয়ে সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর আলোকে স্বল্পমেয়াদে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্যও কিছু পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে একাধিক কমিটি। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে রেলওয়ে কর্মীদেরও সংস্কার কার্যক্রমগুলোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata